শাইখে বালিয়া আল্লামা গিয়াস উদ্দিন পাঠান পীর সাহেব বালিয়ার৷
উপমহাদেশের প্রখ্যাত অলিকুল শিরোমণি বিশিষ্ট হাদিস বিশারদ লাখো আলেমের নিতীবান উস্তাদ আল্লামা গিয়াস উদ্দিন পাঠান রহ. এর সংক্ষিপ্ত জীবনী৷
রসূল সাঃ এর প্রদর্শিত পথে হেদায়েত প্রাপ্তদের মাঝে নববী আদর্শে একজন উজ্জীবিত আলেম ছিলেন শায়খে বালিয়া আল্লামা গিয়াস উদ্দিন পাঠান পীর সাহেব রহ. হেদায়েত প্রত্যাশী মানবকূলের জন্যে তিনি ছিলেন রসূলের আদর্শের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তার আচার-আচরণ ও জীবন আদর্শ ছিলো রসূলের প্রদর্শিত সুন্নতের গড়া৷
পীর সাহেব রহ.এর জন্ম.- বৃহত্তর ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার সাবেক ১১ নং ও বর্তমান ৯ নং বালিয়া ইউনিয়নের পাঠান পাড়া নামক গ্রামে ১১ই মার্চ ১৯৩৯ ইং সালে এক মুসলিম সম্ভ্রান্ত বংশে জন্মগ্রহণ করেন । তিনি শিশু ও বাল্যকালে অন্য দশটা ছেলের চেয়ে ভিন্ন ও প্রতিভাবাণ ছিলেন৷
বংশ পরিচিতি- তার পিতার নাম মরহুম তৈয়্যব উদ্দিন পাঠান,
শায়খে বালিয়ার পীর সাহেবের দাদা মরহুম মৌলভী হাবিবুল্লাহ্ পাঠানের আদিবাস ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ ছিলো, তারপর আঠারো শতকের ইংরেজদের অতি্যাচার উৎপীড়নে নিজেদের জান মাল ও আত্মরক্ষার্থে পরবর্তীতে বালিয়া ইউনিয়নের পাঠান পাড়া নামক স্থানে এসে গোড়াপত্তন করেন। অল্প দিনের মাঝেই পাঠান বাড়ির সুনাম চতুরদিকে ছরিয়ে পরলে হাবিবুল্লাহ্ পাঠানের সততা ও তাকওয়া ও পরহেজগারিতায় এলাকাবাসী মুগ্ধ হয়ে গ্রামের একটি অংশকে পাঠান পাড়া নামে রুপান্তরিত করে।
মরহুম তৈয়্যব উদ্দিন পাঠান তাকওয়া সম্বলিত একজন দ্বীনদার ব্যাক্তি হিসেবে এলাকায় সুপরিচিত ছিলেন, কুরআন হাদিসের বাণী লোকজনের মাঝে প্রচার প্রসার এটা প্রত্যেক মুসলিমের ঈমানী দায়িত্ব হিসেবে দেখতেন, তাই শৈশবে আল্লামা গিয়াস উদ্দিন পাঠান রহ. কে তিনি কুরআন হাদিসের আলোকে জীবন গড়ার দায়িত্বটা তিনিই নিয়ে ছিলেন, তারপর স্থানীয় মক্তবের শিক্ষকদের কাছে শিক্ষা লাভের পর ১৯৪৫ সালে ৬ বছর বয়সে তিনি ঘোঁমগাও মীর বাড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে প্রাথমিক ধাপ শেষ করার পর ১৯৪৯ সালে বাংলাদেশের প্রাচীনতম দ্বিনী শিক্ষা প্রতিষ্টান জামিয়া আরাবিয়া আশরাফুল উলুম বালিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হোন৷
পিতার একান্ত ইচ্ছে ছিলো ছেলেকে একজন রসূলের আদর্শে অনুসারী দ্বীনের একজন প্রকৃত খাদেম হিসেবে আল্লাহ্ কবুল করবেন, সেই মনোবাঞ্ছা নিয়ে দুনিয়াবী শিক্ষা বাদ দিয়ে তাকে মাদ্রাসায় পড়তে অনুপ্রাণিত করেন।
১৯৬০ সালে সিলেট আঞ্চলিক শিক্ষাবোর্ডের অধীনে অনুষ্ঠিত দাওরায়ে হাদিস তথা তাকমীল জামাতে প্রথম স্থানে কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হয়ে শিক্ষকদের নয়নমণি হিসেবে পরিণত হোন৷
২১ বছর বয়সে সিলেট আযাদ দ্বীনি এদারা থেকে প্রথম বিভাগে প্রথম স্থান অধিকার করে কৃতিত্বের সাথে পাশ করার পর তিনি উচ্চতর গবেষনার লক্ষ্যে তিনি শায়খ নূরউদ্দিন গহরপুরী রহ্.এর তত্ত্বাবধানে থাকা অবস্থায় উস্তাদের নির্দেশে উচ্চতর গবেষনার পাশাপাশি তাকে জামিয়া ইসলামিয়া হোসাইনিয়া গহরপুর মাদ্রাসার মুহাদ্দিস হিসেবে যোগদান করে তিনি প্রথম বছরেই কিতাব বিভাগের শীর্ষ স্থানীয় কিতাব গুলোর পাঠদান করে ছাত্র শিক্ষক ও অভিভাবকদের মনে জায়গা নিয়ে প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে একজন আদর্শিক শিক্ষক হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন।
তারপর ১৯৬৮ সালে জামিয়া আরাবিয়া আশরাফুল উলুম বালিয়া মাদ্রাসার তৎকালীন মোহতামিম হযরত মাওলানা দৌলত আলী রহ. এর আমলে একঝাক নবীন প্রতিভাবান তরুণ আলেমের প্রযোজনের হলে মাদ্রাসা ও এলাকার সকলের হৃদয়ে ও মুখে যে নামটি এসেছিলো তিনি ছিলেন আমাদের বালিয়ার পীর আল্লামা গিয়াস উদ্দিন পাঠান রহ্. তারপর বালিয়া মাদ্রাসার তৎকালীন সিনিয়র উস্তাদগণ তার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি প্রথমে বালিয়া মাদ্রাসায় প্রথম বছরে ১ মাস ২য় বছরে ৬ মাস ও ৩য় বছরে ৯মাস ক্লাস করার পর বাকি দিন গুলো গহরপুর মাদ্রাসায় সবকদান করতেন৷
তারপর ১৯৬৮ সালের ২৭শে এপ্রিল তিনি গহরপুর মাদ্রাসা থেকে অব্যাহত নিয়ে বালিয়া মাদ্রাসায় নিয়মিত মুহাদ্দিস হিসেবে যোগদান করেন৷
তারই ধারাবাহিকতায় বালিয়া মাদ্রাসার তৎকালীন মোহতামিম আল্লামা দৌলত আলী রহ্.এর মতে মাদ্রাসার দায়িত্বভার অন্য কাউকে দেয়া প্রয়োজন মনে করে সকল শিক্ষকস্টাফ এলাকাবাসীর মতানুসারে ১৯৮০ সালের ২৬শে আগষ্ট আল্লামা গিয়াস উদ্দিন পাঠান রহ্ এর হাতে মাদ্রাসার দায়ভার গ্রহণ করার দায়ীত্ব আসে৷
মাদ্রাসার দায়িত্ব গ্রহণ করার পর থেকে তিনি বালিয়া মাদ্রাসার শিক্ষা ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে নানান অগ্রনী ভূমিকা পালক করে তার দূরদর্শী ও সদূরপ্রসারী পরিকল্পনায় মাদ্রাসার সার্বিক উন্নয়নে তরান্বিত হয়।
তারপর এই মহামনিষী বালিয়ার পীর আল্লামা গিয়াস উদ্দিন পাঠান রহ. ২ই ফেব্রুয়ারী ২০১৩ সালে লক্ষ লক্ষ ভক্ত সারগেদ ও তাওহিদী জনতার উপস্থিতিতে খতমে বুখারি শরীফের দোয়া শেষ করার পর আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে না ফেরার দেশে চলে যান৷
(সংক্ষিপ্ত)